সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উড়লো ফিলিস্তিনি পতাকা! বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হচ্ছে: ওবায়দুল কাদের বিষয়টি আদালতেই সুরাহার চেষ্টা করব, হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গাজার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে সৌদিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় দেশ থেকে আইনের শাসন উধাও হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১১৫৫ টাকা তীব্র তাপপ্রবাহ : স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ হাইকোর্টের মঙ্গলবারও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথে ভাড়া ‘লাগামহীন’

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথে ভাড়া ‘লাগামহীন’

স্বদেশ ডেস্ক:

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে বিমানভাড়া ‘লাগামহীন’ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার পাশাপাশি রেগুলেটেরি বোর্ড গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছে সংগঠনটি। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

আটাব সভাপতি মনছুর আহামেদ কালাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, টিকিটের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে অভিবাসীরা চরম অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যগামী নতুন যাত্রীরা বাড়িঘর বিক্রি করেও টিকিট কিনতে পারছেন না। সুদের ওপর টাকা দিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে তারা টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। দিনশেষে যাত্রীদের ঘাড়েই পড়ছে খরচের বোঝা।

প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটের বর্তমান ভাড়া ‘অস্বাভাবিক’ বলে জানিয়েছেন আটাব সভাপতি। তিনি বলেন, রুট ভেদে বিমান টিকিটের মূল্য দুই থেকে তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। আসন সংখ্যা বাড়িয়ে টিকিটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব। এ জন্য অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মাধ্যমে অতিরিক্ত শ্লটের অনুমোদনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যেতে পারে।

প্রবাসী কর্মীদের সুবিধার্থে বিশেষ ভাড়া নির্ধারণে সরকারের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। পাশাপাশি অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধিরোধে রেগুলেটরি বোর্ড গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

গতকালের সংবাদসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ ও বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। তার আগে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর কাছে মধ্যপ্রাচ্যের রুটের বিদ্যমান অবস্থা তুলে ধরে নিরসনের দাবি জানায় সংগঠনটি।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, নতুন যাত্রী ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুটিতে আসা যাত্রীর কর্মস্থলে ফেরার হার বেড়েছে। এ সুযোগে এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে কথা বলে সমাধান হয়নি। তাই বিমান প্রতিমন্ত্রীকে আটাব চিঠি দিয়েছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

ভাড়া বৃদ্ধিতে এজেন্সিগুলোর সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিকিট বিক্রিতে এজেন্সির সিন্ডিকেশনের সুযোগ নেই। গ্রুপ টিকিট এখন আর বিক্রি হয় না। তাই টিকিট আটকে রাখার সুযোগ নেই। আসন ফাঁকা থাকার ক্ষেত্রে এজেন্সির দায় নেই। বরং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের জবাব দেওয়া উচিত কেন বাজারে টিকিট নেই অথচ যাত্রাকালে দেখা যায় আসন খালি। আর টিকিট ইস্যু করা হয় সেন্ট্রাল সিস্টেমে। একে বলে জিডিএস (গ্লোবাল ডিসট্রিবিউশন সিস্টেম)। তাই এজেন্সিগুলোর কৃত্রিম সংকট তৈরি বা কারচুপির সুযোগ নেই।

এসব বিষয়ে বেসামরিক পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি আটাব জানিয়েছে। আমি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। ভাড়া কমানো বা বাড়ানোর বিষয়টি অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। এ রুটে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট আছে। আলোচনা করে পরে বলতে পারব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ভাড়া বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে সৌদি আরবে যাওয়ার ভাড়া ৪২ হাজার থেকে বেড়ে ৭৫ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। আরব আমিরাতের দুবাই বা আবুধাবি যেতে আগে লাগত ৪০ হাজার টাকা; এখন তা ৮৭ হাজার টাকা। মাসকাটের ওয়ানওয়ে (একপথ) ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার টাকা; এখন তা ৭২ হাজার টাকা। মধ্যপ্রাচ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, সৌদিয়া, এমিরেটস, ইত্তেহাদসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনস যাত্রী পরিবহন করে। করোনা মহামারীর কারণে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে নিলেও ধীরে ধীরে ফ্লাইট বাড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সৌদি আরব, আরব-আমিরাত, কাতার, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা অনেক প্রবাসী ছুটিতে দেশে ফেরেন। করোনার প্রকোপ দেখা দিলে তারা সময়মতো কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। বৃদ্ধি করা হয় ছুটির সময়। কারও ফুরিয়ে যায় ভিসার মেয়াদও। মহামারী পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে স্বল্প পরিসরে বিদেশযাত্রা শুরু হয় অভিবাসীদের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। তখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদিয়া এয়ারলাইনসের সামনে টিকিট সংকটের জেরে অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিদেশগামী শ্রমিকরা। অবশ্য তখনো ভাড়ার পরিমাণ ‘লাগামহীন’ভাবে বাড়ানো হয়নি।

অবশ্য কর্মস্থলে ফিরতে চাওয়া প্রবাসীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আগের তুলনায় ভিসা প্রদান বেড়েছে। ফলে নতুন কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বেড়ে আকাশপথে চাপ বেড়েছে। তা ছাড়া ব্যবসার কাজে বিদেশ গমনে যাওয়ার হারও বেড়েছে। দিনে অন্তত পাঁচ হাজার যাত্রীর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় যাওয়ার চাহিদা আছে। এর মধ্যে দৈনিক যেতে পারছেন সর্বসাকুল্যে সাড়ে তিন হাজার। অর্থাৎ আরও দেড় হাজার যাত্রীর জন্য আসন ব্যবস্থার প্রয়োজন।

হঠাৎ করে টিকিট চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, করোনার বুস্টার ডোজ ছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি আরবে যাওয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে তার আগেই বিদেশগামীরা কাক্সিক্ষত গন্তব্যে যেতে চান। তা ছাড়া কিছু গন্তব্যে নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ ছিল; এখন তা সহজ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভিজিট ভিসা, জব ভিসা ও ওমরা ভিসা অন্যতম। আরব আমিরাতে ভিসার দরজা উন্মুক্ত হতে শুরু করেছে। আবার করোনার ভয়াবহ ছোবলে হজে যেতে না পারা ধর্মপ্রাণ মানুষ এখন ওমরাহ পালনের ইচ্ছায় সৌদি যেতে চাইছেন। এসব কারণেই চাহিদা বেড়ে গেছে।

অবশ্য আসন সংকটের কথা বলা হলেও আসন ফাঁকা রেখেই ফ্লাইট পরিচালনার অভিযোগও পাওয়া হেছে। গত ৬ ডিসেম্বর বিজি-৪০৩৯ ফ্লাইটে চড়া এক যাত্রী ফেসবুক লাইভে বিমানে আসন ফাঁকার ছবি দেখিয়ে বলেন, টিকিটের জন্য মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অথচ বিমানের আসন ফাঁকা।

যদিও এর জবাবে বিমানকর্মীরা বলছেন, ওই ফ্লাইটের বিজনেস আসন ফাঁকা ছিল ইকোনমি ক্লাস নয়। তবে এ যুক্তি মানতে নারাজ, ট্রাভেল এজেন্টরা। তারা বলছেন, আসন খালি থাকলে বিজনেস ক্লাসেও মানুষ যেতে পারত। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কোনো কারসাজি আছে। ফলে বিদেশযাত্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানিয়েছে, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের বেশি যাত্রী উড়াল দিচ্ছেন। যাদের বেশিরভাগই প্রবাসী কর্মী। ৩ মাস আগে এ সংখ্যা ছিল সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজারের মধ্যে। গত ৩ মাসে ফ্লাইটের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। মহামারীর আগে দৈনিক পরিচালিত ফ্লাইটের সংখ্যা ছিল ১২০টি। উড়োজাহাজ পরিচালনা সংস্থাগুলোর হিসাবে দেশি-বিদেশি মিলে উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহনের বাজার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের। এ বাজারের ২০-২২ শতাংশ মাত্র দেশি উড়োজাহাজ সংস্থার দখলে, বাকি ৭৭-৭৮ শতাংশই বিদেশি উড়োজাহাজের প্রতিষ্ঠানের হাতে। বিদেশি এয়ারলাইনস ও বাংলাদেশ বিমানের টিকিটের দাম কাছাকাছি।

এদিকে এয়ারলাইনস ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। দীর্ঘদিন বিমান বসিয়ে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ, অফিস খরচ ও বেতনভাতা বহন করতে হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের রুটে ওয়ানওয়েতে বিদেশগামীদের চাহিদা বেশি। অর্থাৎ কেবল যাওয়া টিকিটের চাহিদা থাকলেও ফিরতি ফ্লাইটে আসনের বেশিরভাগই ফাঁকা থাকে। তাই টিকিটের দাম বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া যত দেরিতে টিকিট কেনা হবে, ভাড়ার হার তত বাড়বে এটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নিয়ম। আর বিমানের পরিচালন ব্যয়ের ৪০ শতাংশ হচ্ছে জ্বালানি। জ্বালানি খরচ বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। সব মিলে বিমানভাড়া বেড়ে গেছে। দেশি-বিদেশি সব এয়ারলাইনসের ক্ষেত্রে একই অবস্থা।

এভিয়েশন খাতের সংশ্লিষ্টদের অভিমত হচ্ছে- উড়োজাহাজ পরিবহন খাত নিয়ে সরকারের কার্যকর ভাবনা কম। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ট্যাক্স আদায় করেই ক্ষান্ত। অথচ লাখ লাখ মানুষ এ সেক্টর ব্যবহার করছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মানুষের রুটিরুজি এর সঙ্গে যুক্ত। তারা বলছেন, এ সেক্টরের কোনো নীতিমালা নেই। গত ২২-২৩ বছরে যা হয়েছে তা উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো নিজেরাই করেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো জ্বালানি তেলের যে দাম দেয়, তা পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তাই উড়োজাহাজের ভাড়া বাড়িয়ে খরচ সহনীয় পর্যায়ে আনা হচ্ছে। জ্বালানির পাশাপাশি ট্যাক্সও কমাতে হবে। তা না হলে শুধু এয়ারলাইন ব্যবসা করে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877